Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

মাছের মিশ্র চাষ পদ্ধতি

রুই, কাতলা, মৃগেল, রাজপুঁটি, নাইলোটিকা, সিলভার কার্প ইত্যাদি চাষ লাভজনক। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এগুলো চাষ করলে ঝুঁকি কম ও খরচ কম। এজন্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাছের মিশ্র চাষ করলে ক্ষতির সম্ভাবনা নেই।


১. পুকুর নির্বাচন: পুকুর নির্বাচন ও পুকুর প্রস্তুতি এবং ব্যবস্থাপনার উপর মাছ চাষের সফলতা বহুলাংশে নির্ভরশীল। সারা বছর পানি থাকে অথবা মৌসুমি পুকুর এই দুই ধরনের পুকুরেই চাষ করা যায়। পুকুরের আয়তন ১-৩ বিঘা এর মধ্যে হলেই ভালো হয়। তবে এর চেয়ে বড় বা ছোট আকারের পুকুরেও মাছ চাষ করা যায়। পুকুরটি আগাছামুক্ত ও খোলামেলা এবং বন্যামুক্ত স্থানে হওয়াই বাঞ্ছনীয়। পুকুরের গভীরতা ৩-৫ ফুট হওয়াই সমীচীন। বছরে ৫-৬ মাস পানি থাকে এমন পুকুর নির্বাচন করতে হবে। পুকুর পাড়ে বড় ধরনের গাছপালা এবং গাছের পাতা পানিতে পড়তে পারে এ জাতীয় গাছ না থাকাই ভালো। পুকুরের উপর গাছের ছায়া পড়লে পুকুরে মাছের প্রাকৃতিক খাবার প্রচুর পরিমাণে জন্মাতে পারে না। তদুপরি গাছের পাতা পানিতে পচে পানির স্বাভাবিক গুণাগুণ নষ্ট করাসহ উৎপানদশীলতা কমিয়ে দেয়। সাধারণত দো-আঁশ ও কাদাযুক্ত দো-আঁশ মাটি পুকুরের জন্য উত্তম। মাছ চাষ ব্যবস্থাপনার জন্য পুকুরটি আয়তাকার হওয়া উচিত। সার্বিক ব্যবস্থাপনার স্বার্থে পুকুরের অবস্থান বসতবাড়ির নিকটে হওয়াই ভালো।


২. পুকুর প্রস্তুতি: পুকুরে পোনা মজুদের আগে অবশ্যই পুকুর ভালোভাবে প্রস্তুত করে নিতে হবে। মাছের শারীরিক বৃদ্ধির স্বার্থে পুকুরে প্রয়োজনীয় পরিমাণ প্রাকৃতিক খাবার তৈরি নিশ্চিত করতে হবে। পুকুর প্রস্তুতিকালে বিভিন্ন পর্যায়গুলো হলো- জলজ আগাছা নিয়ন্ত্রণ, রাক্ষুসে মাছ ও অবাঞ্ছিত প্রাণী দমন, চুন ও সার প্রয়োগ ইত্যাদি।


জলজ আগাছা নিয়ন্ত্রণ : পুকুরে অপ্রয়োজনীয় আগাছার উপস্থিতিতে মাছ চাষ বিভিন্নভাবে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। মাছের চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি করে ও মৎস্যভুক প্রাণীর শিকারের সুযোগ করে দেয়। জলজ আগাছা মাটির, পানির মৌল উপাদান বা পুষ্টি গ্রহণ করে মাটি ও পানি অনুর্বর করে ফেলে। ক্ষেত্র বিশেষে পানিতে অক্সিজেনের স্বল্পতা ঘটায়। বিভিন্ন প্রকার সার প্রয়োগের ফলে সৃষ্ট পানির পুষ্টিগুলো জলজ আগাছা বহুলাংশে গ্রহণ করে নেয়। ফলশ্রুতিতে পুকুরে প্রয়োজনীয় পরিমাণ মাছের খাদ্য জন্মে না। তাই পুকুরে শেওলাজাতীয় উদ্ভিদ, ভাসমান উদ্ভিদ, লতানো উদ্ভিদ ও নিমজ্জমান উদ্ভিদজাতীয় জলজ আগাছা জন্মাতে ও বৃদ্ধি ঘটতে দেয়া উচিত নয়। জলজ আগাছার মধ্যে সাধারণত কচুরিপানা, কলমিলতা, হেলেঞ্চা, ঝাউ ইত্যাদি লক্ষ করা যায়; যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। সূর্যের আলো পুকুরের পানিতে খাদ্য তৈরিতে সহায়ক এবং আগাছা পুকুরের পানিতে সূর্যকিরণ প্রবেশ করতে বাধার সৃষ্টি করে। সুতরাং সকল প্রকারের জলজ আগাছা শিকড়সহ দমন করা অপরিহার্য। তন্তুজাতীয় শেওলা পুকুরে থাকলে তা পরিমিত পরিমাণে (প্রতি শতাংশে ৮ গ্রাম) তুঁত ব্যবহার করে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। অন্যান্য আগাছা কেটে পুকুর থেকে টেনে উঠাতে হবে।


রাক্ষুসে মাছ ও ক্ষতিকারক প্রাণী অপসারণ : পুকুর শুকানোর মাধ্যমে রাক্ষুসে মাছ যেমন- বোয়াল, চিতল, শোল, গজার, আইর, টাকি ইত্যাদি এবং চাষের ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় মাছ যেমন- মলা, চান্দা, চেলা, পুঁটি, দারকিনা ইত্যাদি সম্পূর্ণরূপে সরিয়ে ফেলতে হবে। মাছের জন্য ক্ষতিকর অন্যান্য প্রাণী যেমন- সাপ, ব্যাঙ, কাঁকড়া ইত্যাদি মেরে ফেলার ব্যবস্থা নিতে হবে। পুকুর শুকানোর কাজ শুকনা মৌসুমেই করা উচিত। পানি নিষ্কাশনের পর পুকুরের তলার মাটি ন্যূনতম সাতদিন ধরে রৌদ্রে শুকাতে হবে। এর পরেও যদি অতিরিক্ত কাদা থাকে তাহলে কিছু কাদা তুলে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে। এরপর মাটি শুকানোর পর পুকুরের তলায় চাষ দেওয়ার অন্তত ২/৩ দিন পর প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি সরবরাহ করতে হবে (যদি সম্ভব হয়) নতুবা বৃষ্টির পানির অপেক্ষায় থাকতে হবে।


কোনো কারণে পুকুর শুকানো সম্ভব না হলে জাল টেনে অথবা বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে রাক্ষুসে ও অবাঞ্ছিত মাছ এবং ক্ষতিকর প্রাণী দমন করতে হবে।


৩. চুন প্রয়োগ: পুকুরে মাটি ও পানি অম্ল ও দূষণমুক্ত করা, মাছের রোগ জীবাণু ও পরজীবী ধ্বংস করতে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও পানিতে ক্যালসিয়াম বাড়াতে তথা পুকুরের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য চুন প্রয়োগ অত্যাবশ্যক। পুকুরের মাটি ও পানির গুণাগুণের ওপর চুনের সঠিক মাত্রা নির্ভরশীল। সাধারণত পুকুরের তলদেশে শুকনা অবস্থায় পাথুরে চুন গুঁড়া করে শতাংশ প্রতি ১ কেজি হারে সারা পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। তবে অম্ল­মান ৪ হলে ১০ কেজি, ৪.৫ হলে ৫ কেজি, ৫.৫ হলে ৩ কেজি, ৬.৫ হলে ২ কেজি প্রতি শতাংশে প্রয়োগ করতে হয়। চুন প্রয়োগের ২-৩ দিন পর পুকুরে পানি সরবরাহ করতে হবে। পানি শুকানো না হলে পানি ভর্তি পুকুরে একই হারে চুন পানিতে গুলে সারা পুকুরে ঢালু পাড়সহ ছিটিয়ে দিতে হবে।


৪. সার প্রয়োগ: পুকুরে মাছের জন্য উদ্ভিদ ও প্রাণী জাতীয় প্রাকৃতিক খাদ্য বা প্ল­াঙ্কটন জন্মানোর জন্য পুকুরে জৈব ও অজৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। চুন প্রয়োগের অন্তত ৪-৫ দিন পর নিম্নলিখিত হারে সার প্রয়োগ করা যেতে পারে :    
৫. বিষক্রিয়া পরীক্ষা: পানিতে বিষক্রিয়া থাকলে পোনা মারা যাবে বিধায় সঠিক ফলাফল পাওয়া যাবে না। পোনা ছাড়ার আগে পানির বিষক্রিয়া পরীক্ষা করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে যে কোনো পাত্রে পোনা রেখে অথবা পুকুরের পানিতে হাঁপা স্থাপন করে কিছু পোনা ছেড়ে অন্তত ২৪ ঘণ্টা রাখার পর পোনা মারা না গেলে পোনা ছাড়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। পোনা ছাড়ার আগের দিন পুকুরে ২-৩ বার হররা বা জাল টেনে নেয়া যেতে পারে।


৬. পোনা মজুদ: পানি ও মাটির গুণাগুণের ওপর ভিত্তি করে সঠিক মাত্রায় উন্নতমানের পোনা মজুদের ওপরই মাছ চাষের সফলতা অনেকাংশে নির্ভরশীল। একক চাষের ক্ষেত্রে ৩-৫ ইঞ্চি আকারের (৫-১০ গ্রাম ওজনের) পোনা নির্বাচন করাই উত্তম। ছোট আকারের পোনা মজুদে পোনা মৃত্যুর হার বেশি হবে এবং আশানুরূপ ফলন লাভের সম্ভাবনা কম থাকে। সার প্রয়োগের ৮-১০ দিন পর প্রাকৃতিক খাদ্য পরিমিত পরিমাণে পুকুরের পানিতে বিদ্যমান থাকলে প্রতি শতাংশ পুকুরে মোট ৩০-৩৫টি চারা পোনা মজুদ করা যাবে। এর মধ্যে রুই ১০-১৫টি, কাতলা ৮-১০টি, মৃগেল ৮-১০টি, রাজপুটি ৫-৬টি, নাইলোটিকা ৫-৬টি পোনা প্রতি শতাংশে ছাড়তে হবে।


পোনা মাছ সকালে বা বিকেলে পাড়ের কাছাকাছি ঠাণ্ডা পরিবেশে ছাড়াই উত্তম। অতি বৃষ্টিতে বা কড়া রোদের সময় পোনা ছাড়া উচিত নয়। পুকুরে পোনা বেঁচে থাকার হার বাড়ানোর জন্য পোনা ছাড়ার কারিগরি পদ্ধতি অবশ্যই অনুসরণ করে পোনা ছাড়তে হবে। নিকটবর্তী স্থানের জন্য পোনা পরিবহনের ক্ষেত্রে মাটির হাঁড়ি বা অ্যালুমিনিয়ামের পাত্রে পোনা পরিবহন করা যেতে পারে। তবে দূরবর্তী স্থানের জন্য অক্সিজেন ভর্তি পলিথিন ব্যাগে পোনা পরিবহন করা অধিকতর নিরাপদ। পুকুরে পোনা ছাড়ার সময় পোনা ভর্তি ব্যাগ বা পাত্রের অর্ধাংশ পুকুরের পানিতে ১০-১৫ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে। এরপর ব্যাগ বা পাত্রের মুখ খুলে দিতে হবে। অতঃপর পাত্র বা ব্যাগের কিছু পানি বের করে এবং পুকুরের পানি ভেতরে ঢুকিয়ে উভয় পানির তাপমাত্রা সমতায় আনতে হবে। যখন পাত্রের ভেতরের এবং পুকুরের পানির তাপমাত্রা সমান হয়েছে বলে প্রতীয়মান হবে তখন ব্যাগ বা পাত্রটিকে কাত করলে পোনাগুলো আপনা আপনি পুকুরে চলে যাবে।


৭. পোনা মজুদ পরবর্তী সার প্রয়োগ : পুকুরে পোনা মাছ মজুদের পর সাপ্তাহিক ভিত্তিতে নিয়মিতভাবে সার প্রয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে জৈবসার যেমন- গোবর প্রতি ১৫ দিন অন্তর ১ কেজি অথবা হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা ৫০০ গ্রাম হারে পুকুরে ছিটিয়ে প্রয়োগ করা যেতে পারে। এ ছাড়া প্রতি শতাংশে ইউরিয়া ৪০ গ্রাম ও টিএসপি ২০ গ্রাম হারে একটি পাত্রে ৩০ গুণ পানির সাথে মিশিয়ে অন্তত ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে রোদের সময় গোলানো সার সারা পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। উল্লেখ্য, পুকুরের পানি যদি অত্যধিক সবুজ রঙ ধারণ করে তাহলে সার প্রয়োগ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হবে। মেঘলা ও বৃষ্টির দিনে সার প্রয়োগ করা যাবে না।


৮. মাছের খাদ্য : মাছের খাদ্য প্রধানত দুই রকম- ক. প্রাকৃতিক খাদ্য খ. সম্পূরক খাদ্য।


ক. প্রাকৃতিক খাদ্য দুই রকম-
১. উদ্ভিদ কণা (
Phytoplancton) : জলাশয়ে প্রাকৃতিকভাবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সবুজ কণা তৈরি হয়, যা মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন- শেওলা, ফেকাস, নষ্টক, ডায়াটম, ভলবক্স, এনাবিনা ইত্যাদি।
২. প্রাণী কণা (
Zooplanton) : জলাশয়ের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রাণী মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়। যেমনÑ ময়না, ড্যাফনিয়া, বসমিনা, কেরাটেলা, ফিলিনিয়া, সাইক্লপস, প্রোটোজোয়া, রটিফার ইত্যাদি।


এসব প্রাকৃতিক খাদ্য জলাশয়ে প্রাকৃতিকভাবে জন্মে। তবে বেশি পরিমাণে জন্মানোর জন্য জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়। প্রাকৃতিক খাদ্য খাওয়া মাছ দ্রুত বড় হয় ও মাছ খেতে সুস্বাদু। পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য আছে কি-না বোঝার পদ্ধতি হচ্ছে কাচের গ্লাসে পুকুরের স্বচ্ছ পানি নিয়ে সূর্যের আলোর দিকে ধরলে যদি গ্লাসে ৮-১০টি কণা দেখা যায় তবে বুঝতে হবে প্রাকৃতিক খাদ্য আছে। সেক্কিডিস্ক বা হাত পুকুরের পানিতে ডুবালে যদি হাতের তালু বা ডিস্ক দেখা যায় তবে বুঝতে হবে প্রাকৃতিক খাদ্য নাই। পুকুরের পানির রঙ হালকা সবুজ বা বাদামি দেখা গেলে বুঝতে হবে প্রাকৃতিক খাদ্য আছে। প্রাকৃতিক খাদ্য যথেষ্ট পরিমাণে থাকলেও মজুদ মাছের মোট ওজনের ২-৫% সম্পূরক খাদ্য দিতে হয়।


খ. সম্পূরক খাদ্য : পুকুরে উৎপাদিত প্রাকৃতিক খাদ্যের অভাব হলে মাছের দ্রুত শারীরিক বৃদ্ধির নিমিত্তে প্রাকৃতিক খাবারের পাশাপাশি সম্পূরক খাবার সরবরাহ করা একান্ত প্রয়োজন। মাছ ছাড়ার পরের দিন হতে প্রতিদিন সকালে ও বিকেল মজুদকৃত মাছের মোট শরীরের ওজনের শতকরা ৫-৬ ভাগ হারে সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে। উল্লে­খ্য, প্রতি ২০ কেজি মাছের জন্য অন্ততপক্ষে ১ কেজি খাবার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। প্রতি ১৫ দিন বা ১ মাস অন্তর একবার জাল টেনে কিছু মাছ ধরে ওজনের গড় বের করে নিয়ে মোট ওজনের উপর আনুপাতিক হারে খাবার দিতে হবে।

সরিষার খৈল ৩০% ও গমের ভুসি বা চালের কুঁড়া ৭০% অনুপাতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে দুটি খাবারের মিশ্রণ পুকুরের বিভিন্ন স্থানে অথবা ৩-৪টি নির্দিষ্ট স্থানে প্রয়োগ করা যেতে পারে। উল্লে­খ্য, ভাসানো খাবার হিসাবে গমের ভুসি বা কুঁড়া পানির উপরে শুকনা অবস্থায় সপ্তাহে অন্তত ২-৩ দিন সরবরাহ করা ভালো। সহজ ব্যবস্থাপনায় অল্প খরচে শুধুমাত্র গমের ভুসি বা চালের কুঁড়া শতাংশ প্রতি ১ম মাসে ৫০ গ্রাম, ২য় মাসে ১০০ গ্রাম, ৩য় মাসে ১৮০ গ্রাম, ৪র্থ মাসে ২২০ গ্রাম, ৫ম মাসে ২৬০ গ্রাম ও ৬ষ্ঠ মাসে ৩০০ গ্রাম দিতে হবে।


সম্পূরক খাদ্য তৈরির নিয়ম : ফিশমিল ১০%, চালের কুঁড়া ৫৩%, সরিষার খৈল ৩০.৫০%, ভিটামিন ও খনিজ মিশ্রণ ০.৫% ও চিটাগুড় ৬% মেপে নিতে হয়। এগুলো গুঁড়ো করে মিশাতে হবে। এরপর পানি দিয়ে ম- তৈরি করে পিলেট মেশিনে দিয়ে ছোট ছোট বড়ি তৈরি করতে হবে। এগুলো শুকিয়ে মাছকে খেতে দেয়া যাবে। প্রতিদিন নির্দিষ্ট স্থানে, নির্দিষ্ট সময়ে সম্পূরক খাদ্য দিতে হয়। খাদ্যগুলো পুকুরে পানির নিচে নির্দিষ্ট গভীরতায় দিতে হয়। ভাসমান খাদ্য দিলে খাদ্যের অপচয় কম হয়। সম্পূরক খাদ্য দিলে মাছের খাদ্যের অভাব দূর হয়। মাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়াও টোপাপানা, ক্ষুদিপানা, কলাপাতা, নেপিয়ার বা প্যারা জাতীয় নরম ঘাস, পাতা ইত্যাদি প্রতিদিন লবণ-পানিতে ধুয়ে সকাল-বিকেল পুকুরে আয়তাকার বেষ্টনীর মধ্যে সরবরাহ করা যেতে পারে।


৯. অন্যান্য পরিচর্যা: পুকুরের পানি ও মাটির বিভিন্ন ভৌত ও রাসায়নিক গুণাগুণের ওপর ভিত্তি করে পুকুরে সার ও খাবার প্রয়োগ করা সমীচীন হবে। মাছের শারীরিক বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য ও রোগবালাই পরীক্ষা করার জন্য প্রতি মাসে অন্তত একবার জাল টেনে নমুনা দেখা তথা সামগ্রিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা উচিত। পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন, পিএইচ, কার্বন ডাইঅক্সাইড ও প্ল­াঙ্কটনের পরিমাণ নিয়মিতভাবে পরিমাপ করা প্রয়োজন। মাছ ধরে পুনরায় পুকুরে ছাড়ার আগে ২০ লিটার পানিতে ৫০ মিলিগ্রাম পটাশ (পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট) অথবা ২০ লিটার পানিতে ১ মুঠো লবণ-পানি দ্রবণে ১-২ মিনিট গোসল করানো উচিত। কোনো রোগবালাই দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। পুকুরের পানির ওপর ঘন লাল স্তর পড়লে তা কলাগাছের পাতা পেঁচিয়ে পানির ওপর দিয়ে ভাসমান অবস্থায় টেনে নিয়ে এক জায়গায় জমা করে ঘন ফাঁসের জাল বা কাপড় দিয়ে তুলে ফেলতে হবে। সকালের দিকে বা দিনের অন্য সময়ে যদি অত্যধিক পরিমাণে মাছ পানির ওপর ভেসে উঠে খাবি খেতে দেখা যায় তাহলে ধরে নিতে হবে যে পানিতে অক্সিজেনের অভাব রয়েছে। এ অবস্থায় পুকুরে জাল টেনে, বাঁশ পিটিয়ে বা সাঁতার কেটে পানিতে ঢেউ এর সৃষ্টি করে পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়াতে হবে। কয়েক দিনব্যাপী মেঘলা আকাশ থাকলে মাছের এ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। পুকুরে মাছ খাবি খাওয়া অবস্থায় সাময়িকভাবে সার ও খাদ্য প্রয়োগ বন্ধ রাখতে হবে। বাইরের বিষাক্ত পানি যেন পুকুরে কোনো অবস্থাতেই না ঢুকে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। পুকুরে তন্তুজাতীয় শেওলা ও অন্যান্য আগাছার পরিমাণ বেড়ে গেলে পুকুরের পানিতে অক্সিজেন ঘাটতি দেখা দিতে পারে। ফলে মাছ মারা যেতে পারে। তাই তন্তুজাতীয় শেওলা ও জলজ আগাছা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।


১০. মাছ আহরণ ও ফলন : সময়মতো মাছ ধরা ও বিক্রয় করা মাছ চাষের ক্ষেত্রে একটি উল্লে­খযোগ্য পদক্ষেপ। অপেক্ষাকৃত বড় আকারের বিক্রয়যোগ্য মাছ ধরে বাজারজাত করা উচিত। আংশিক আহরণ পদ্ধতিতে মাছ ধরে নেয়ার পর আহরণকৃত মাছের সংখ্যা পূরণ করার জন্য বড় আকারের সমপরিমাণ পোনা পুকুরে ছাড়তে হবে। উপোরল্লি­খিত পদ্ধতিতে মাছ চাষ করলে এবং আংশিক পদ্ধতিতে মাছ আহরণ করা হলে অধিক ফলন পাওয়া সম্ভব।

 

কৃষিবিদ ফরহাদ আহাম্মেদ
কৃষি প্রাবন্ধিক, সহকারী অধ্যাপক, কৃষিশিক্ষা, শহীদ জিয়া মহিলা কলেজ, ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল। বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক প্রাপ্ত লেখক। মোবাইল: ০১৭১১-৯৫৪১৪৩


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon